জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর মানুষের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে অনুমোদন করেছে “মানবাধিকার সার্বজনীন ঘোষণাপত্র। এ ঘোষণাপত্র অনুযায়ী জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, নারী-পুরুষ, আর্থিক অবস্থাভেদে বিশ্বের সব দেশের সকল মানুষের এই অধিকারগুলো আছে। সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকারগুলো হচ্ছে মানবাধিকার। নিচের ছক থেকে কয়েকটি মৌলিক মানবাধিকার জেনে নিই ।
• মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন
• স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার
• সমাজে সবার সমান মর্যাদার অধিকার
• শিক্ষা গ্রহণের অধিকার
• প্রত্যেকের নিরাপত্তা লাভের অধিকার
• নির্যাতন ও অত্যাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করার অধিকার
• বিনা কারণে গ্রেফতার ও আটক না হওয়ার অধিকার
• আইনের চোখে সমতা
• সবার ন্যায্য মজুরি পাওয়ার অধিকার
• ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার
• সম্পত্তি ভোগ ও সংরক্ষণের অধিকার
• নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার
• নিজের চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার নারী-পুরুষ সমান অধিকার
আমরা সবার মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করব এবং এ বিষয়ে সকলকে সচেতন করব। কেউ কোনো মানবাধিকার বিরোধী কাজ করলে প্রয়োজনে প্রতিবাদ করব।
অধিকার আদারের বিষয়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর শিক্ষকের সহায়তায় আলোচনা কর।
• সরকার কী করতে পারে?
• সমাজ কী করতে পারে?
• মানুষ কী করতে পারে?
• তুমি কী করতে পার?
একটি অধিকার বেছে নাও এবং এ অধিকারটি কেন গুরুত্বপূর্ণ তা বর্ণনা কর। কাজটি জোড়ায় কর।
যেকোনো একটি অধিকার নিয়ে ছোট দলে ভূমিকাভিনয় কর। ধরে নাও, এই অধিকার থেকে তুমি বঞ্চিত। অধিকার আদায়ে তুমি কী করতে পার?
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দাও।
স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার কোনটি?
ক. মানব পাচার খ. যেকোনো স্থানে যেতে পারা
গ. রপ্তানি ঘ. আমদানি
প্রতিটি শিশুই একে অপরের থেকে আলাদা। কেউ চঞ্চল, কেউ শান্ত। কেউ ভিড়ে থাকতে ভালোবাসে, কেউ একা একা। তবে আমাদের সবারই নিজের মতো থাকার অধিকার আছে। উদাহরণ হিসাবে আমরা অটিস্টিক শিশুদের কথা জানতে পারি। অটিস্টিক শিশুরা অটিজম সমস্যায় আক্রান্ত। অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়, মস্তিষ্কের একটি বিকাশগত সমস্যা। এধরনের শিশুদের দলে কাজ করতে অসুবিধা হয়। অন্যের স্পর্শেও তারা আঁতকে ওঠে। তাদের ভাষার ব্যবহারও ভিন্ন। তারা একই কাজ একটানা করতে থাকে। তাদের বিশেষ যত্ন নিলে তারাও সমানভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে।
তাহলে একটি অটিস্টিক শিশুর সাথে ক্লাসে কেমন ব্যবহার করা উচিত? আমাদের বুঝতে হবে প্রতিটি শিশু একে অপরের থেকে আলাদা এবং তাদের ধৈর্যশক্তিও অনেক কম। আমাদের উচিত সবার সাথে মিলেমিশে থাকা। আমরা এমন আচরণ করব না যাতে তারা কষ্ট পায় এবং উত্তেজিত হয়।
শিশুদের ভিন্ন ভিন্ন আচরণকে গ্রহণ করা মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত। আমরা সবাই একে অপরের থেকে আলাদা। তোমার শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের আচরণে কী ধরনের পার্থক্য আছে। শিক্ষকের সহায়তার আলোচনা কর ।
পাশের পৃষ্ঠার ছবিটি থেকে যেকোনো একটি বৈশিষ্ট্য বেছে নাও। তোমার ক্লাসের কোনো শিক্ষার্থীর আচরণ যদি এমন হয়, তবে তুমি তার সাথে কেমন আচরণ করবে? ভেবে দেখ, সবচেয়ে ভালো আচরণটা কী হতে পারে?
অটিজম ছাড়া মানুষের আচরণে আর কী কী তারতম্য থাকতে পারে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দাও।
অটিস্টিক শিশুরা কোন ক্ষেত্রে লক্ষ?
ক. গণিত খ. সাঁতার গ. রান্না ঘ. দৌঁড়
আমাদের সমাজে শিশুদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কয়েকটি উদাহরণ পড়ি।
• অনেক শিশু তাদের পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত।
• অনেক শিশু খেত-খামারে, ইটের ভাটায়, দোকানে, কলকারখানায় কাজ করে। বাংলাদেশে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ তবে ১৪-১৮ বছর বয়সী শিশুকে হালকা কাজে নিয়োগ দেয়া যায়।
• পরিবারের সামর্থ্য না থাকার শহরের অনেক শিশু গৃহহীন ।
• অনেক সময় সামান্য কারণে বা বিনা কারণে শিশুদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়, এতে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়।
• অনেক সময় শিশুদের বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়, এটি মানবাধিকার বিরোধী কাজ।
এছাড়া মানবাধিকার বিরোধী আরও অনেক কাজ আমাদের সমাজে ঘটে থাকে। মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
কোনো শিশুর মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে দেখলে তুমি কী করবে তা শিক্ষকের সহায়তায় আলোচনা কর। সেই শিশুর অবস্থা সম্পর্কে তার পরিবারের সাথে কথা বলার অধিকার কি তোমার আছে? এক্ষেত্রে তুমি কী কী করতে পার?
পাশের পৃষ্ঠা থেকে একটি উদাহরণ বেছে নাও। কোনো শিশু যদি এধরনের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তবে তুমি কী করবে তা বর্ণনা কর ।
পাশের পৃষ্ঠা থেকে একটি উদাহরণ নির্বাচন কর। অভিনয়ের মাধ্যমে দেখাও যে এ ধরনের পরিস্থিতিতে তুমি কী ব্যক গ্রহণ করবে। অভিনয়ে থাকবে একজন শিশু, একজন ঘটনার সাক্ষী এবং একজন কর্তৃপক্ষ।
অল্প কথায় উত্তর দাও :
শিশুশ্রমে যুক্ত না হয়ে জ্ঞান অর্জন করলে কীভাবে একটি শিশু বেশি লাভবান হতে পারে?
আমাদের সমাজে কীভাবে মেয়েরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা জেনে নিই :
• মেয়েরা ছেলেদের মতো শিক্ষার সমান সুযোগ পায় না ।
• চাকরির ক্ষেত্রেও মেয়েরা পিছিয়ে থাকে।
• কাজের ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের মতো সমান পারিশ্রমিক পায় না ।
• বাড়িতে কাজে সহায়তাকারীরা যথাযথ পারিশ্রমিক, খাবার ও স্বাস্থ্যসেবা পায় না ।
• বাড়িতে কাজে সহায়তাকারীদের অনেক সময় আমাদের দেশ থেকে অন্য দেশে পাচার করে দেওয়া হয় ।
অনেক সময় সামান্য কারণে কাজে সহায়তাকারী মেয়েকে নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও নারী ও শিশুদের বিদেশে পাচার করা হয়। অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ও অমানবিক কাজে তাদের ব্যবহার করা হয়। এধরনের অন্যায় আচরণ আমাদের মেনে নেওয়া উচিত নয়। এটি মানবাধিকার বিরোধী কাজ। আমাদের উচিত মেয়েদের সমান অধিকার রক্ষায় কাজ করা।
নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিয়ে শিক্ষকের সহায়তায় আলোচনা কর। অসমতার কিছু উদাহরণ দাও। এক্ষেত্রে ভূমি কী করতে পারা আচরণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারি।
নারী ও শিশু পাচার বন্ধ হওয়া প্রয়োজন কেন?
ছোট দলে ভূমিকাভিনয় কর। ধর, তুমি এমন একজন মেয়েকে জানো যাকে বাইরে ছেলেদের মতো খেলতে দেওয়া হয় না। তুমি তার সমানাধিকার নিশ্চিতের জন্য কী করবে? তিনজন মিলে মা, বাবা ও মেয়েটির ভূমিকায় অভিনয় কর।
অল্প কথায় উত্তর দাও :
ৰাড়িতে কাজে সহায়তাকারীর প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
আরও দেখুন...